বাংলাদেশের আরও দুই পণ্য ভৌগােলিক নির্দেশক (GI) পণ্যের স্বীকৃতি পাচ্ছে। পণ্য দুটি হলাে— রাজশাহীর ফজলী আম ও বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি। আবেদন করার পর এ দুটি কৃষি পণ্যের ভৌগােলিক নির্দেশক যাচাই করে ৬ অক্টোবর ২০২১ দুটি জার্নাল প্রকাশ করা হয় এবং পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে কেউ আপত্তি না করলে সনদ দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে GI নিবন্ধন পাওয়া পণ্যের সংখ্যা ১১টি হবে। ১৭ নভেম্বর ২০১৬ প্রথম GI পণ্য হিসেবে নিবন্ধন সনদ পায় ‘জামদানি শাড়ী’।
রাজশাহীর ফজলীআম
রাজশাহীর ফজলী আম একটি নাবী মৌসুমী জাত। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পাকে এবং আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এটির সংগ্রহকাল।
ভৌগােলিক এলাকা
রাজশাহী জেলার ৯টি (বাঘা, পুঠিয়া, পবা, বাঘমারা, তানাের, মােহনপুর, চারঘাট, গােদাগাড়ী ও দুর্গাপুর) উপজেলায় আমের চাষ হয়। তবে বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় আমের এই জাতটি বেশি পরিমাণে চাষাবাদ হয়।
এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন
- বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে বাংলাদেশ
- বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি
- দেশের প্রথম স্পেশালাইজড হাসপাতাল
- কৃষকের সুরক্ষায় কিষানি ড্রোন
- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কর্মপরিকল্পনা
- বাংলাদেশের নারী শিক্ষায় মালালা ফান্ড
- জাতীয় কৃষি কাউন্সিল গঠন
- ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরু
- বিশ্বে প্রথম দ্বৈত টিকার অনুমােদন
- যুক্তরাজ্যে নতুন বাণিজ্যনীতি
আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে রাজশাহীর বাঘা এলাকার ফজলী আম ‘বাঘা ফজলী’ নামে কলকাতার বাজারে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ছিল। বর্তমানে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ ও অন্যান্য জেলাতেও এ আম বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়ে থাকে।
ভৌগােলিক নির্দেশক পণ্যের বর্ণনা
ফজলী আমের উৎকৃষ্ট জাতসমূহের মধ্যে রাজশাহীর ফজলী খুবই জনপ্রিয় বাণিজ্যিক জাত। ফল’ বড় আকারের এবং অনেকটা লম্বা ও চ্যাপ্টাকৃতির। পরীক্ষায় দেখা যায়, এ ফল গড়ে ১৩.৮ সেমি. লম্বা, প্রস্থ ৯.৫ সেমি., পুরুত্ব ৭.৮ সেমি. এবং গড় ওজন ৬৫৫ গ্রাম।
শাঁস-আঁশবিহীন, রসালাে এ ফলের গড় মিষ্টতা (TSS) ১৭.৫%, এটি সুস্বাদু ও মিষ্টি। আঁটি গড়ে ১২.২ সেমি. লম্বা, প্রস্থ ৫.১ সেমি., পুরুত্ব ১.৪ সেমি. এবং গড় ওজন ৭৭ গ্রাম। ফলের গড় ভক্ষণযােগ্য অংশ ৭৬.৩%। ফল পরিপক্ক হতে (ফুল আসা থেকে) প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস সময় লাগে। গাছের উচ্চতা প্রায় ১৫-১৮ মিটার।
বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি
ভৌগােলিক নির্দেশকের নাম :
বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি বলতে বাংলাদেশের ভৌগােলিক সীমারেখায় চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত এবং জলসীমা থেকে আহরিত বাগদা চিংড়িকে বােঝায়। এর ইংরেজি নাম Bangladesh’s BlackTiger Shrimp।
প্রকার :
বাগদা চিংড়ির বৈজ্ঞানিক নাম Penaeus monodon (Pmonodon)। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) মতে, মৎস্যচাষ ও খামার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে লােনা পানিতে উৎপাদিত চিংড়িকে Shrimp এবং স্বাদু পানিতে উৎপাদিত চিংড়িকে Prawn বলা হয়।
বাগদা লােনা পানির চিংড়ি রপ্তানি বাজারে এটি Black Tiger Shrimp নামে পরিচিত। বাগদা চিংড়ি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূল ও সামুদ্রিক অঞ্চলে উদ্ভূত একটি আদি/স্থানীয়। (Endemic) মৎস্য প্রজাতি।
বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
Penaeus গণভুক্ত ২৭ প্রজাতির সামুদ্রিক চিংড়ি আছে; বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় এর মধ্যে Black Tiger Shrimp অন্যতম। আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের বাজারে বাগদা চিংড়ির বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম। সারা বিশ্বে এ প্রজাতির চিংড়ি উৎপাদনকারী শীর্ষ দশ দেশের একটি বাংলাদেশ।
রপ্তানিকৃত মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যে একক প্রজাতি হিসেবে। বাগদা চিংড়ির অবদান সর্বোচ্চ (৬০-৭০%) হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির প্রায় ৭৩% এবং রপ্তানি আয়ের ৭৭% বাগদা চিংড়ির অবদান। বাগদা চিংড়ির এ অর্থনৈতিক গুরুত্ব ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত একটি স্মারক ডাকটিকিটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।
বাগদা চিংড়ির বর্তমান অবস্থা :
বাংলাদেশে বর্তমান পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই উপকূলীয় এলাকাগুলােতে প্রথাগত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের প্রচলন ছিল। ১৯৫০-এর দশকে এদেশে এমন শতাধিক বৃহদাকার জলাশয়ে চিংড়ি চাষ করা হতাে। বিগত ১৯৭৯-৮০ সালে মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্পে ADB’র মাধ্যমে প্রথম আনুষ্ঠানিক সহায়তা প্রদান করে।
আশির দশকের শুরুতে আধা-লােনা পানিতে মত্স্য খামার স্থাপন প্রকল্পের উদ্যোগে খুলনা অঞ্চলে পােল্ডারের মধ্যে এবং কক্সবাজার অঞ্চলে লবণের সাথে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। আশির দশকে মৎস্য অধিদপ্তর হ্যাচারিতে চিংডির রেণু উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করে এবং বেসরকারি পর্যায়ে হ্যাচারি স্থাপনে সহায়তা প্রদান করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক ও রপ্তানিমুখী একটি কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, চিংড়ি চাষের এলাকাও বিপুলভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।
নাম | আবেদনের তারিখ | আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান |
রাজশাহীর ফজলী আম | ৯ মার্চ ২০১৭ | ফল গবেষণা কেন্দ্র |
বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি | ৪ জুলাই ২০১৯ | মৎস্য অধিদপ্তর |