শব্দ ও পদের গঠন
এক বা একাধিক ধ্বনি দিয়ে তৈরি শব্দের মূল অংশকে শব্দমূল বলে। শব্দমূলের এক নাম প্রকৃতি। প্রকৃতি দুই ধরনের: নামপ্রকৃতি ও ক্রিয়াপ্রকৃতি। ক্রিয়াপ্রকৃতির অন্য নাম ধাতু। নামপ্রকৃতি ও ধাতুর সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়। নামপ্রকৃতির উদাহরণ: মা, গাছ, শির, লতা ইত্যাদি। ধাতুর উদাহরণ: ক, যা, চল, ধৃ ইত্যাদি।
নামপ্রকৃতি ও ধাতুর সঙ্গে যেসব শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়, সেগুলাের নাম উপসর্গ ও প্রত্যয়:
উপসর্গ: যেসব শব্দাংশ শব্দমূলের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে, সেগুলােকে উপসর্গ বলে। ‘পরিচালক’ শব্দের ‘পরি অংশ একটি উপসর্গ।
প্রত্যয়: যেসব শব্দাংশ শব্দমূলের পরে বসে নতুন শব্দ গঠন করে, সেগুলােকে প্রত্যয় বলে। সাংবাদিক” শব্দের ইক’ অংশ একটি প্রত্যয়।
উপসর্গ ও প্রত্যয় দিয়ে তৈরি শব্দকে সাধিত শব্দ বলা হয়। উপসর্গ ও প্রত্যয় ছাড়া শব্দ গঠনের আরাে কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান প্রক্রিয়া হলাে সমাস, যার মাধ্যমে একাধিক শব্দ এক শব্দে পরিণত হয়। যেমন হাট’ ও ‘বাজার’ শব্দ দুটি সমাসবদ্ধ হয়ে হয় হাটবাজার। এছাড়া কোনাে শব্দের দ্বৈত ব্যবহারে নতুন শব্দ গঠিত হলে তাকে বলে শব্দদ্বিত্ব, যেমন ‘ঠক’ ও ‘ঠক’ মিলে গঠিত হয় ঠকঠক’, একইভাবে ‘অঙ্ক ও অনুরূপ ধ্বনি ‘টঙ্ক মিলে হয় অঙ্কটঙ্ক।
এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন
- ক্রিয়াবিশেষণ
- ক্রিয়া
- বিশেষণ
- সর্বনাম
- বিশেষ্য
- শব্দের শ্রেণিবিভাগ
- সংখ্যাবাচক শব্দ
- অর্থের দিকে দিয়ে বাক্যকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? প্রত্যেকটির সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।
- নরবাচক ও নারীবাচক শব্দ
- শব্দদ্বিত্ব : অনুকার দ্বিত্ব, ধ্বন্যাত্মক দ্বিত্ব, পুনরাবৃত্ত দ্বিত্ব
শব্দ যখন বাক্যের মধ্যে থাকে, তখন তার নাম হয় পদ। পদে পরিণত হওয়ার সময়ে শব্দের সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত হয়, এগুলাের নাম লগ্নক। লগ্নক চার ধরনের:
বিভক্তি : ক্রিয়ার কাল নির্দেশের জন্য এবং কারক বােঝাতে পদের সঙ্গে যেসব শব্দাংশ যুক্ত থাকে, সেগুলােকে বিভক্তি বলে। বিভক্তি দুই প্রকার: ক্রিয়া-বিভক্তি ও কারক-বিভক্তি। করলাম ক্রিয়াপদের লাম’ শব্দাংশ হলাে ক্রিয়া-বিভক্তি এবং কৃষকের পদের ‘এর’ শব্দাংশ কারক-বিভক্তির উদাহরণ।
নির্দেশক: যেসব শব্দাংশ পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পদকে নির্দিষ্ট করে, সেগুলােকে নির্দেশক বলে। ‘লােকটি বা ভালােটুকু পদের টি’ বা ‘টুকু হলাে নির্দেশকের উদাহরণ।
বচন: যেসব শব্দাংশ পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পদের সংখ্যা বােঝায়, সেগুলােকে বচন বলে। ছেলেরা বা বইগুলাে পদের রা’ বা ‘গুলাে হলাে বচনের উদাহরণ। বলক: যেসব শব্দাংশ পদের সঙ্গে যুক্ত হলে বক্তব্য জোরালাে হয়, সেগুলােকে বলক বলে। তখনই বা ‘এখনও পদের ই বা ‘ও’ হলাে বলকের উদাহরণ।
বাক্যের যেসব পদে লগ্নক থাকে সেগুলােকে সলগ্নক পদ এবং যেসব পদে লগ্নক থাকে না সেগুলােকে অলগ্নক পদ বলে। ছেলেরা ক্রিকেট খেলে’- এই বাক্যের ‘ছেলেরা ও ‘খেলে সলক পদ আর ক্রিকেট অলগ্নক পদ।
শব্দ ও পদের মধ্যকার কয়েকটি পার্থক্য নিচে দেখানাে হলাে:
শব্দ | পদ |
১. প্রতিটি জনগােষ্ঠীর নিজস্ব শব্দভান্ডার থাকে। সাধারণত অভিধানে তা সংকলিত হয়। | ১. শব্দ যখন বাক্যে স্থান পায়, তখন তার নাম হয় পদ। |
২. অভিধানের শব্দগুলাে বিচ্ছিন্ন ও পরস্পর সম্পর্কহীন | ২. বাক্যের মধ্যে পদগুলাে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। |
৩. শব্দের অংশ উপসর্গ ও প্রত্যয়। | ৩, পদের অংশ বিভক্তি, নির্দেশক, বচন ও বলক। |
৪. গঠনগতভাবে শব্দ দুই শ্রেণির: মূল শব্দ ও সাধিত শব্দ। | ৪. গঠনগতভাবে পদ দুই রকমের: অলগ্নক পদ ও সলগ্নক পদ। |
৫. শব্দ শুধু রূপতত্ত্বের আলােচ্য | ৫. পদ একইসঙ্গে রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বের আলােচ্য। |
অনুশীলনী
সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দাও।
১. শব্দ যখন বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে কী বলে?
ক. পদাণু
খ. পদ
গ. বাক্যাংশ
ঘ, প্রকৃতি
২. পদের লগ্নক কত ধরনের?
ক. দুই
খ. তিন
গ. চার
ঘ. পাঁচ
৩. কোনটি শব্দের শেষে যুক্ত হয় না?
ক. প্রত্যয়
খ. বিভক্তি
গ. বলক
ঘ. উপসর্গ
৪. যেসব শব্দাংশ পদের যঙ্গে যুক্ত হয়ে বক্তব্য জোরালাে করে তাকে কী বলে?
ক. বলক
খ. প্রত্যয়
গ. বিভক্তি
ঘ. উপসর্গ
৫. কোনটি সাধিত শব্দ?
ক. গাছ
খ. পরিচালক
গ. মাছ
ঘ. চাঁদ
৬. কোনটি মৌলিক শব্দ?
ক. চাঁদ
খ. বন্ধুত্ব
গ. প্রশাসন
ঘ. দায়িত্ব
৭. শব্দের কোথায় প্রত্যয় যুক্ত হয়?
ক. প্রথমে
খ. শেষে
গ. মধ্যে
ঘ. যে কোনাে স্থানে
৮. কোনটি নির্দেশক?
ক. রা
খ. পরি
গ. টুকু
ঘ. ই
৯. কোনটি লগ্নক নয়?
ক. প্রত্যয়
খ. নির্দেশক
গ. বলক
ঘ. বচন
১০. ‘নৌকার ছইয়ে নীল মাছরাঙাটি বসে আছে’ বাক্যে অলগ্নক পদ কোনটি?
ক. নৌকার
খ. ছইয়ে
গ. নীল
ঘ. মাছরাঙাটি