পরিবেশ দূষণ : মানব সভ্যতার সমস্ত অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে বর্তমান সময়ের পরিবেশ ও প্রতিবেশগত সমস্যা। পৃথিবী ও প্রকৃতি রক্ষার এ গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। এ প্রেক্ষাপটেই পরিবেশ নিয়ে আমাদের এ বিশেষ আয়ােজন ।
মানুষ আকাশ, বাতাস, মাটি, পানি, গাছপালা এবং প্রাণিকূল ইত্যাদি বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে পৃথিবী পরিমণ্ডলে বাস করে। এ পারিপার্শ্বিক অবস্থাই মানুষের পরিবেশ। আর পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদিতে যখন ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক পরিবর্তন ঘটে এবং তা যখন জীবজগতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে তখন তাকে বলা হয় পরিবেশ দূষণ।
পরিবেশ দূষণ
মানব ইতিহাসের প্রযুক্তিগত চরম। উৎকর্ষতার এ লগ্নে পরিবেশ দূষণ এমনই এক বিষয়, যা মানবসভ্যতার সমগ্র অর্জনকে হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছে। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, আর্সেনিক দূর্ষণ, ওজোন গ্যাস হ্রাস, গ্রিনহাউস ইফেক্ট ইত্যাদি এরূপ কিছু পরিবেশ দূষণ। শিল্পায়ন, নগরায়ন, বৃক্ষ নিধনসহ নানা কারণে পরিবেশ দূষণ হয়ে থাকে। পরিবেশ দূষণের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। এতে প্রাণি ও উদ্ভিদ জগতের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
পরিবেশ দূষণের কারণ
পরিবেশ বিভিন্ন কারণে দূষিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও এর জন্য দায়ী। মানুষ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলছে, অপরিকল্পিতভাবে মাটি ও পাহাড় কাটছে, অপ্রয়ােজনে উচ্চস্বরে হর্ণ বাজাচ্ছে, নির্বিচারে নদী-দীঘি-পুকুরসহ জলাশয়গুলিকে দূষিত বা ভরাট করছে, জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়ােগ করছে, বনাঞ্চল ধ্বংস করছে, অপরিকল্পিত নগরায়ন করছে, শিল্পের বর্জ্য জলাশয়ে ফেলছে, জীববৈচিত্র্য নষ্ট করছে।
এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন
- বিশ্ববিদ্যালয় জীবন : নিজেই নিজের অভিভাবক
- বাংলাদেশ ব্যাংক সহকারী পরিচালক লিখিত পরীক্ষার পরামর্শ
- ভাইভায় ভালাে করার কৌশল
- সর্বশেষ ছয় মাসে অনুষ্ঠিত সরকারি-বেসরকারি চাকরির নিয়ােগ পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান
- বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা প্রস্তুতি
- ভালাে সিভি তৈরির কৌশল
- বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্যারিয়ার যা জানা জরুরি
- শব্দ নিয়ে শব্দ হােক ভুলেরা সব জব্দ হােক
- প্রাথমিক শিক্ষক নিয়ােগের মৌখিক পরীক্ষায় সফল হতে করণীয়
- মনোযোগ দাও প্রতিটি অধ্যায়ে
তাছাড়া পরিবেশ দূষণে বিশেষভাবে দায়ী। “ডার্টি ডজন’ নামে পরিচিত ১২টি মারাত্মক রাসায়নিক দ্রব্যও বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার মধ্যে ৮টি কীটনাশক– অলড্রিন। (aldrin), ডায়েলড্রিন (dieldrin), ক্লোরডেন (chiordane), এনড্রিন (endrin), হেপ্টাক্লোর (heptachlor), ডিডিটি (DDT), মিরেক্স (mirex), এবং টক্সাফেন (toxaphene)। দুটি শিল্পজাত রাসায়নিক দ্রব্য— পিসিবি (PCBs), হেক্সাক্লোরােবেনজিন (hexachlorobenzone)। আর অন্য দুটি হলাে কারখানায় উৎপাদিত অনাকাক্ষিত, উপজাত- ডাইওক্সিন (dioxin) এবং ফিউরান (furan)। খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে এ বিষাক্ত পদার্থগুলাে পরিবেশের ওপর তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটাচ্ছে।
পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব
পরিবেশের ভাল-মন্দ মানুষের কৃতকর্মের ফল। মানুষের উদাসীনতায় দিন দিন পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। মানুষ নিষ্ঠুরভাবে পরিবেশকে বিনাশ করছে। এতে মানুষ নানা রােগসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছে।
শারীরিক প্রভাব
পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ পরােক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে নিম্নোক্ত নানা শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
- দূষিত এলাকার গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে এবং শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।
- দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে চোখ, নাক বা গলার সংক্রমণ হচ্ছে। সেই সাথে ব্রঙ্কাইটিস। বা নিউমােনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
- দীর্ঘদিন বায়ু দূষণের মধ্যে থাকায় ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরােগ, লিভার বা কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
- শিল্প কলকারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি ব্যবহারে চর্মরােগ, টাইফয়েড, জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের মতাে রােগ হচ্ছে।
- দুষিত পানির প্রভাবে খাদ্যচত্রের মাধ্যমে সীসা, প্লাস্টিকসহ নানা ক্ষতিকর পদার্থ মানবদেহে চলে আসছে।
- শব্দ দূষণের কারণে হাইপার টেনশন, হৃদরােগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যাসহ শিশুর জন্মগত ত্রুটি হচ্ছে।
প্রাকৃতিক প্রভাব
পরিবেশ দূষণে ঘূর্ণিঝড়, জলােচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, বন্যা, নদীভাঙ্গন, খরা, মরুকরণ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ একাধারে যেমন প্রকৃতির উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তেমনি ভূমিরূপ পরিবর্তনসহ প্রকৃতির নানাবিধ স্থায়ী ও অস্থায়ী পরিবর্তন। সাধন করছে। সেই সাথে এগুলাে । জনজীবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে।
পরিবেশ রক্ষায় করণীয়
প্রাণীকূলের অস্তিত্ব রক্ষায় দ্রুত পরিবেশের সংরক্ষণ প্রয়ােজন। বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ণ কল্পে দীর্ঘমেয়াদি। প্রকল্প হিসেবে বদ্বীপ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮। প্রণীত হয়েছে। এছাড়া সংবিধানের পঞ্চদশ সংশােধনীতে ১৮ক নামে নতুন একটি অনুচ্ছেদ সংযােজন করা হয়েছে।
যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশের মানােন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করাকে রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এখন প্রয়ােজন দেশের প্রচলিত পরিবেশ বিষয়ক নিয়ম-নীতির যথাযথ প্রয়ােগ নিশ্চিত করা। সেই সাথে নবায়নযােগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দেয়া, বনায়ন প্রকল্প বৃদ্ধি, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও শিল্পায়নসহ নানা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
পরিবেশ আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্য পরিবেশ সংরক্ষণে সকলের সচেতন থাকা প্রয়ােজন। এ লক্ষ্যে পরিবার থেকে পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষের অস্তিত্ব, প্রকৃতির। জীবনধারণ সুষ্ঠ পরিবেশের ওপর নির্ভর। করে। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্ব রক্ষায় তাই পরিবেশকে রক্ষা করতেই হবে।