মেদ কমানোর উপায় হিসেবে যে দশটি অভ্যাস আপনাকে মানতে হবে

Preparation BD
By -
0

যে ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আমাদের পেটে মেদ জমিয়ে তোলে, এমন দশটি অভ্যাসের কথা আজকে আলোচনা করবো। এই লিস্টের কিছু অভ্যাস আপনাকে আশ্চর্য করবে, আর কিছু হয়তো আপনি আগে থেকেই জানেন । আমি প্রত্যেকটি বিষয়ের কারণ বুঝিয়ে বলে সমাধানও আলোচনা করব ।

খাবার বাদ দেয়া

অনেকেই সকালের নাস্তা বাদ দিয়ে একবারে দুপুরে খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এক বেলা খাবার বাদ দিলে পরবর্তীতে বেশি খাবার খাওয়া বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা অনেকের ক্ষেত্রেই বেড়ে যায় । এতে ওজন বাড়ার ও মেদভুঁড়ি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে । যদি আপনার ক্ষেত্রে এমনটি হয়, তাহলে কোনো বেলার খাবার বাদ দিবেন না। যদি খাবার বাদও যায়, তখন সতর্ক থাকবেন যেন পরের বেলায় অতিভোজন বা অস্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়া হয়।

আনমনে খাওয়া

টিভিতে খেলা নাটক বা অন্য কিছু দেখতে দেখতে যদি খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে মেদভুঁড়ি জমার সম্ভাবনা থাকে। কীভাবে? সমস্যাটি টিভি বা খেলা বা নাটকের না, সমস্যাটা হচ্ছে আনমনে খাওয়ার। আপনি যখন আরেকটা কাজে ব্যস্ত, আপনি কতটুকু খাচ্ছেন সেটার দিকে সাধারণত মনোযোগ কম থাকে।

প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়া হয়ে যেতে পারে। আর অনেক সময়ই টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া আমরা খিদা লেগেছে বলে খাই না। বরং টিভি দেখতে দেখতে কিছু একটা খেতে হবে, এ মন অভ্যাস হয়ে গেছে তাই খাই। আবার এই খাবারগুলো অনেকসময় স্বাস্থ্যকর হয়না।

দেখা যায় ভাজাপোড়া, মুড়ি-চানাচুর এসব খাবার আমরা এক হাতে নিচ্ছি আর খাচ্ছি এইযে অস্বাস্থ্যকর খাবার, পরিমাণে বেশি, অতিরিক্ত ক্যালোরি, এসব কারণে শরীরে চর্বি জমার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়। তাহলে সমাধান হিসেবে কোন কোন সময় আপনি আনমনে খাবার খান সেটা খুঁজে বের করবেন। আর একটু আগে যে ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ এর কথা বললাম, সেটার চর্চা করতে পারেন।

মেদ কমানোর উপায়মানসিক চাপ

মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণে মেদভুঁড়ি জমে এবং এটা হয় কয়েক ভাবে । আমরা যখন দিনের পর দিন মানসিক চাপে ভুগি, তখন আমাদের শরীরে ‘কর্টিসল’ নামের একটি হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোটা বাড়লে অতিরিক্ত চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার ক্রাভিং বা প্রবল ইচ্ছা জাগতে পারে। ওজন বা মেদভুঁড়ি বাড়াতে ‘কর্টিসল’ এর প্রভাব এখানেই শেষ না।

আরো তিনটা কাজ সে করে –

  • শরীরের অন্যান্য জায়গা, যেমন: পিঠ, উরু, নিতম্ব এই সমস্ত জায়গার চেয়ে পেটের অংশে চর্বি জমতে বিশেষ সাহায্য করে ‘কর্টিসল’ । এটাকে আমরা বলি ‘সেন্ট্রাল অ্যাডিপোসিটি’
  • আরেকটা হরমোনকে বাড়িয়ে দেয়, যে হরমোনটা আমাদের বেশি করে ক্ষুধা অনুভব করায় ।
  • লেপটিন নামের এক হরমোন কমিয়ে দেয়, যেটা আমাদের পেট ভরা অনুভব করায়।

সারাংশ হলো-

এর ফলে পেটভরা কম মনে হয়, ক্ষুধা বেশি লাগে, আর বেশি খেলে চর্বিটা হয়, সেটা পেটের অংশে জমায়। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, পছন্দের কাজ, মেডিটেশন প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে মানসিক চাপকে দুর রাখবেন।

খারাপ ঘুম

মেদ কমানোর উপায়কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে কম ঘুমের সাথে ওজন বেড়ে যাবার একটা সম্পর্ক আছে। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। আপনি যখন রাত জাগেন, তখন কিছু একটা খেতে ইচ্ছা করতে পারে ঘুমিয়ে থাকলে তো এই অতিরিক্ত খাবারটা খাওয়া হতো না। আবার রাত জেগে কাজ করার সময় আমরা যে খাবার গুলো সাধারণত খাই, সেগুলো প্রায়শই ক্ষতিকর ফ্যাট বা চিনিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার হয়।

খাবার স্বাস্থ্যকর কিনা তা নিয়ে ঐসময় অত চিন্তা আমরা সাধারণত করিনা। আর তারপর যদি নিয়মিত ঘুম কম হয়, তখন সেটা মানসিক চাপ বা স্ট্রেস তৈরি করতে পারে। সেই স্ট্রেস আবার ভিন্নভাবে বাড়তি ওজন এবং মেদভুঁড়ি কারণ হতে পারে। ঘুমের উপায় নিয়ে আরেকটা ভিডিওতে বিস্তারিত বলেছি , লিংক দিয়ে দিব বিস্তারিত সেখানে দেখে নিবেন।

দ্রুত খাওয়া

আপনি যখন খাবার খাওয়া শুরু করেছেন ,সে খাবার পেটে যায় এবং পেটের সাথে আপনার ব্রেইন এর একটা কথাবার্তা হয়। পেট ভরেছে কিনা, এইটা ব্রেইনের জানতে ২০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আপনি যদি দ্রুত খান, তাহলে বেশি খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। কারণ ব্রেইন হয়তো তত দ্রুত পেটের কাছ থেকে জেনে আপনাকে বলতে পারবেনা যে আপনার পেট ভরে গেছে। সমাধান হচ্ছে ধীরে ধীরে খাবারের প্রতি মনোযোগ দিয়ে খাওয়া। যেটাকে আমরা ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ বলি। আর যদি খুব দ্রুত খেতেই হয়, তাহলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার নিয়ে সেখানেই খাওয়া শেষ করা।

বড় প্লেট

প্লেটটাতো মুল বিষয় না মূল বিষয় হচ্ছে, আপনি পরিমাণে কতটুকু খাচ্ছেন। প্লেটটা বড় হলে সাধারণত খাবার একটু বেশি পরিমাণে নেওয়া হয় । আর আমরা সাধারণত প্লেটে যতটুকু খাবার নেই, পুরোটাই শেষ করে উঠতে চাই । হয়তো কিছু বাকি থাকতে আমার মনে হচ্ছে পেট ভরে গেছে, কিন্তু প্লেইটে যেহেতু খাবার আছে ,সেই খাবারটা রেখে আমরা উঠতে চাই না, আর এভাবেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়। তাই শুরু থেকেই যদি প্লেটটা একটু আকারে ছোট হয়, বা খাবার নেয়ার সময় আমরা পরিমাণটা খেয়াল রাখি, তাহলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

সৌজন্যবোধ

দাওয়াত খেতে গেলে আমরা অনেক সময় সৌজন্যবোধ থেকে বেশি খেয়ে ফেলি। প্লেটে কেউ খাবার দিয়ে দিলে সেটা শেষ করে ওঠা কর্তব্য হিসেবে ধরে নেই। আবার বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা হলে,পেট ভরা থাকার পরেও কিছু একটা অর্ডার দেয়া হয়। এই অভ্যাসগুলো ওজন বাড়াতে ও মেদভুঁড়ি জমাতে পারে।

এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সচেতন ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন । অতিরিক্ত খাবার শরীরে যে সকল বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা মাথায় রেখে খাবার খাওয়ার বা না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন। দাওয়াতে আরেকটা প্রচলণ হচ্ছে, শেষে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া। এই ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখবেন, যেন অতিভোজন না হয়। পরিমিত পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবেন।

মেদ কমানোর উপায়সাদা চাল, সাদা আটা

সাদা চাল, সাদা আটা তৈরি করার সময় ফাইবার সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ফেলে দেয়া হয়। ফাইবার আমাদের খাবারকে আস্তে আস্তে হজম করতে সহায়তা করে। ফাইবার ফেলে দেয়ার কারণে খাবারগুলো দ্রুত হজম হয়, রক্ত ব্লাড সুগারের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সাদা চাল সাদা আটার মত এমন প্রক্রিয়াজাত শস্যদানা বেশি খাওয়ার সাথে মেদভুঁড়ি সম্পর্কযুক্ত।

অন্যদিকে লালসালু ঢেঁকিছাঁটা চাল, অনেকে যেটাকে কুড়াকাটা চাল বলেন, তারপর লাল আটা এমন গোটা শস্যদানা বেশি খাওয়ার সাথে মেদভুঁড়ি কম হওয়ার সম্পর্ক দেখা গেছে । তাহলে কি করা যেতে পারে? লাল চাল বা ঢেঁকিছাঁটা চাল খাবেন। আমি দুইটা চাল আপনাদেরকে দেখিয়ে দেই।

এইটা লাল চালের ওপরের পরতটা ফেলে দিয়েই সাদা চাল তৈরি করা হয়েছে। সাথে সাথে অনেকগুলো প্রয়োজনীয় পুষ্টি আমরা হারিয়েছি । আস্তে আস্তে লাল চাল, লাল আটা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন। প্রথমে ভালো নাও লাগতে পারে, কিন্তু এটা মেদভুঁড়ি কমাতে সাহায্য করবে এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার করবে।

লো ফ্যাট খাবার

লো ফ্যাট খাবারের মেদভুঁড়ি হতে পারে এটা শুনে আপনার কাছে একটু খটকা লাগতে পারে। কারণ আমরা সাধারণত মনে করি যে লো ফ্যাট খাবার হচ্ছে স্বাস্থ্যকর। এটা সত্য যে লো ফ্যাট খাবার স্বাস্থ্যকর হতে পারে , তবে সবক্ষেত্রে না, একটু ব্যাখ্যা করলেই বুঝবেন। একটা খাবার যখন লো ফ্যাট করা হয়, তখন সেখান থেকে ফ্যাট সরিয়ে বা কমিয়ে ফেললো। এতে খাবারটা অনেকের কাছেই কম সুস্বাদু লাগে।

খাবার কম সুস্বাদু হলেতো বিক্রি হবে কম, সুস্বাদু করতে আর বিক্রি বাড়াতে তখন ওই খাবারে অতিরিক্ত চিনি যোগ করে দেয়া হয়। অতিরিক্ত চিনি অনেক ক্যালোরি যুক্ত করে অস্বাস্থ্যকর এবং ওজন বাড়ায়। আপনি হয়তো ভাবছেন লো ফ্যাট খাবার খাই তবুও কেন ওজন বাড়ে! এটাটা কেন হতে পারে, তা জেনে গেলেন। এখন লো ফ্যাট খাবার কেনার আগে সেখানে চিনি যোগ করা হয়েছে কিনা দেখে নেবে।

শুয়ে বসে থাকা

শুয়ে বসে থাকলে যে শরীরের চর্বি জমে এটা সবাই জানেন। তাই এইটা নিয়ে বেশি কথা না বলে সমাধান বলি- সপ্তাহে ৫ দিন মাত্র ৩০ মিনিট করে দ্রুত হাঁটলেই অনেক উপকার পাবেন । রোগব্যাধির সম্ভাবনা কমবে, শরীরে চর্বির পরিমাণ কমবে। রাতারাতি শরীরে চর্বি কমার আশা করবেন না। হাঁটা চালিয়ে যাবেন, সাথে কিছু ভারোত্তোলন করতে পারলে আরো ভালো। আর অন্য কোন ব্যায়াম আপনার জন্য উপযুক্ত হলে সেটা তো করতেই পারেন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !