বাংলাদেশ নৌবাহিনী এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সমুদ্রসীমার অতন্দ্র প্রহরী। দেশের তিন-চতুর্থাংশের সমান আয়তনের সমুদ্রসীমা রক্ষা ছাড়াও সেখানকার খনিজ সম্পদ ও মৎস্য আহরণসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে নৌবাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। এই বাহিনী সম্পর্কে কিছু তথ্য :
নৌবাহিনীর জন্মকথা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্ম হয়। মার্চ ১৯৭১ এর শুরুর দিকে পাকিস্তানি সাবমেরিন পি এন এস ম্যাংরাে ফ্রান্সের তুলন সাবমেরিন ডকইয়ার্ডে যায় পাকিস্তানি ৪১ জন সাবমেরিনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। তাদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন বাঙালি অফিসার। আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে ২৫ মার্চের গণহত্যার কথা শুনে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের মধ্যে প্রথমে ফিরে আসা ৮ জন কমান্ডাে সাবমেরিনারই মূলত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভিত্তি তৈরি করেন।
নাম | বাংলাদেশ নৌবাহিনী |
ইংরেজি নাম | Bangladesh Navy |
প্রতিষ্ঠা | ১৯৭১ |
সদর দপ্তর | বনানী ঢাকা |
প্রথম নৌপ্রধান | ক্যাপ্টেন নুরুল হক |
বর্তমান নৌপ্রধান | এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল |
সার্ভিস শাখা | ৬টি |
শাখাগুলো হলো : নির্বাহী, ইঞ্জিনিয়ারিং, সাপ্লাই, ইলেক্ট্রিক্যাল, শিক্ষা ও মেডিকেল শাখা। |
পরবর্তীতে আরও বিদ্রোহী নৌসেনা। তাদের সাথে যুক্ত হন। জুলাই ১৯৭১ সেক্টর কমান্ডার্স কনফারেন্সে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে নৌবাহিনীর জনবল ছিল ৪৫ জন আর সরঞ্জাম ছিল ভারত থেকে পাওয়া দুটি টহল জাহাজ পদ্মা ও পলাশ। যুদ্ধের সময় ১০ নম্বর সেক্টর ছিল নৌ সেক্টর।
আরো পড়ুন : সফল টিমওয়ার্ক এর ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল
মহান মুক্তিযুদ্ধে নৌ সেনাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ শহীদ রুহুল আমিনকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রদান ছাড়াও ৫ জনকে বীর উত্তম, ৮ জনকে বীর বিক্রম এবং ৭ জনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়।
নারী কর্মকর্তা
জানুয়ারি ২০০০ বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ১৪ জন নারী কর্মকর্তা যােগদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে নারীদের প্রথম পথযাত্রা শুরু হয়। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতাে ৪৪ জন নারী নাবিক বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অফিসার র্যাংকিং এ ক্যাডেট এন্ট্রি ও ডিরেক্ট এন্ট্রি উভয় বিভাগেই নারী কর্মকর্তারা যােগদান করতে পারেন।
অপারেশন জ্যাকপট
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নৌ-কমান্ডাে বাহিনীর পরিচালিত প্রথম অভিযান ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’। ১৬ আগস্ট ১৯৭১ ভােরে (মতান্তরে ১৫ আগস্ট) দেশের দুইটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মােংলা এবং দুইটি নদী বন্দর চাদপুর ও নারায়ণগঞ্জে একযােগে একই নামে পরিচালিত অপারেশনগুলাে চালানাে হয়। অপারেশনে নৌ-কমান্ডােরা পাকিস্তান। বাহিনীর মােট ২৬টি পণ্য ও সমরাস্ত্রবাহী জাহাজ ও গানবােট ডুবিয়ে দেন।
বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি
বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শিক্ষানবিশ ক্যাডেটদের শিক্ষাদান ও মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৬ সালে। ১৪ জন ক্যাডেট নিয়ে চট্টগ্রামের জলদিয়াস্থ মেরিন একাডেমি চত্বরে অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশ নেভাল। একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন : ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরামর্শ ও সাজেশন্স ২০২২
২ জুন ১৯৮৮ এ একাডেমি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে এবং কর্ণফুলী নদীর মােহনায় পতেঙ্গাতে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম শুরু করে। আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর’ এ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশি ও বিদেশি নৌবাহিনী অফিসারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অত্র একাডেমি বাংলাদেশের। জাতীয় অঙ্গনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে।
যুদ্ধ জাহাজ ও সাবমেরিন
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বর্তমান নৌ বহরে রয়েছে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ফ্রিগেট, দুইটি টহল ফ্রিগেট, ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী কষ্টে এবং অন্যান্য ছােট জাহাজ। বাংলাদেশ নৌবাহিনী তাদের জাহাজের নামের আগে ‘বানৌজা’ ৪ উপসর্গটি ব্যবহার করে যা বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজকে বােঝায়। ১২ মার্চ ২০১৭ নৌবাহিনীতে যুক্ত সাবমেরিন দু’টির নাম বানৌজা নবযাত্রা ও বানৌজা জয়যাত্রা। মিং ক্লাসের এ সাবমেরিন দুটি চীনের তৈরি।
খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড
খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড বাংলাদেশের একটি জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামত প্রতিষ্ঠান। এটি জার্মান সহায়তায় ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর ৯০’র দশকে এসে এটি লােকসানে পড়ে ও দেনার পরিমাণ ৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় পৌছে। পরে ৩ অক্টোবর ১৯৯৯ বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের মধ্যেই দেনা শােধ করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
২০২৩-এ অফিসার ক্যাডেট ব্যাচ
জাহাজের ক্যাপ্টেন, এয়ারক্রাফট পাইলট, নৌকমান্ডাে ও সাবমেরিনার। অনলাইন আবেদনের সীমা : ১৬ মে ২০২২। আবেদন ফি : ৭০০। শিক্ষাগত যােগ্যতা: মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক (বিজ্ঞান বিভাগ)।
মনােনয়ন পদ্ধতি :
- প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রাথমিক সাক্ষাৎকার
- লিখিত পরীক্ষা (আইকিউ, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান)
- ISSB
- চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- চূড়ান্ত মনােনয়ন পর্ষদ
- নেভাল একাডেমিতে যােগদান।
- প্রথম র্যাংক : সাব লেফটেন্যান্ট।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য : https://joinnavy.navy.mil.bd/