বাংলা রচনা গ্রীষ্মের দুপুর

Preparation BD
By -
0

গ্রীষ্মের দুপুর

ভূমিকা :

গ্রীষ্মের দুপুর মানেই সূর্যের প্রচণ্ড তাপদাহ। খাঁ খাঁ রােদ্র, তপ্ত বাতাসে আগুনের হলকা। সবুজ পাতা নেতিয়ে পড়ার দৃশ্য। বটের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া রাখাল ছেলে। চারদিকে নিঝুম, নিস্তব্দ, ঝিমধরা প্রকৃতি। ঘামে দরদর তৃষ্ণার্ত পথিক। কবির ভাষায় :

ঘাম ঝরে দরদর গ্রীষ্মের দুপুরে
খাল বিল চৌচির জল নেই পুকুরে।
মাঠে ঘাটে লােক নেই খাঁ খাঁ রােদুর
পিপাসায় পথিকের ছাতি কাপে দুদুর।

গ্রীষ্মের দুপুরের অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্য এটি। রুক্ষ, শুষ্ক বৈচিত্র্যহীন, নিপাট দিনের স্থিরচিত্র। গ্রামের কোনাে পুকুরঘাটে, কুয়ােতলায়, নদীর তীরে, বিস্তীর্ণ চরাচরে রােদে প্রকৃতির দিকে তাকালে গ্রীষ্মের দুপুরের রূপ স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

গ্রীলের দুপুরে প্রকৃতির অবস্থা :

চৈত্রের কাঠফাটা রােদে গ্রীষ্মের পদধ্বনি শােনা যায়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এলে সেই তীব্রতা আরাে বৃদ্ধি পায়। সূর্যের প্রখর তাপে সমস্ত প্রকৃতি যেন নির্জীব হয়ে ওঠে। সবজির নধর পাতা খরতাপে নুয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে ঘূর্ণি হাওয়ায় ধুলাে ওড়ে, ঝরে পড়ে গাছের হলুদ পাতা। দূর আকাশে পাখনা মেলে চিল যেন বৃষ্টিকে আহ্বান জানায়। পাতার আড়ালে ঘুঘুপাখির উদাস-করা ডাক শােনা যায়। প্রকৃতি যেন পরিশ্রান্ত হয়ে নিঝুম মুহূর্তগুলাে কাটাতে থাকে। পুকুরঘাটে তৃষ্ণার্ত কাক, গাছের ছায়ায় পশু-পাখির নিঃশব্দ অবস্থান গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের পরিচিত দৃশ্য।

গ্রীষ্মের দুপুরে জনজীবন:

গ্রীষ্মের দুপুর মানবজীবনেও নিয়ে আসে নিশ্চলতার আমেজ। কর্মব্যস্ত জীবনে আসে অবসাদ। মাঠে-ঘাটে জীবনের সাড়া যায় কমে। প্রচণ্ড রােদের মধ্যে যারা কাজ করে, তাদের মাথায় থাকে মাথাল। কর্মমুখর দিনে গ্রীষ্মের দুপুরে সময় কিছুটা যেন ধীরগতিতে অগ্রসর হয়। রাখাল ছেলে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়।

পথিকজন পথের ক্লান্তি ঘােচাতে বিশ্রামের প্রহর গােনে। নিঃশব্দ প্রকৃতি আর নীরব মানুষের কাছে গ্রীষ্মের দুপুর যেন স্থির। বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন, কোথাও যেন স্বস্তি নেই, শান্তি নেই। মাঠঘাট চৌচির, নদী-জলাশয় জলশূন্য। মাঠে মাঠে ধুলােওড়া বাতাস। আগুনটালা সূর্য, ঘর্মাক্ত দেহ, ক্লান্তি আর অবসাদে গ্রীষ্মের দুপুর যেন অসহনীয় হয়ে ওঠে।

মুহূর্তের জন্যে প্রাণ সিক্ত হতে চায়, একটু ঠাণ্ডা বাতাসের স্পর্শ পেতে চায় মন। গ্রীষ্মের দুপুর গ্রামজীবনে নিয়ে আসে বিশ্রামের সুযােগ। কেউ কেউ নির্জন দুপুরে দিবানিদ্রায় ঢলে পড়ে। গৃহিণীরা সংসারের কাজের একটু অবসরে বিশ্রামের সুযােগ খোঁজে। তালপাখার বাতাসে একটু প্রাণ জুড়ায়। শীতল পাটিতে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। আমবাগানে দুষ্টু ছেলেদের আনাগােনা হয়তাে বেড়ে যায়। গ্রীষ্মের দুপুরে শহরের দৃশ্য অবশ্য অন্যরকম। প্রচণ্ড রােদে রাস্তার পিচ গলতে থাকে।

রাস্তায় যানবাহনের চলাচল কমে আসে। গলির ঝাপখােলা দোকানপাটে ঝিমধরা ভাব। ঘরে বাইরে কর্মের জগৎ হঠাৎ যেন ঝিমিয়ে আসে। অফিস পাড়ার কর্মব্যস্ততাও এ সময় একটু শিথিল হয়ে আসে। ক্লান্তি ও শ্রান্তি ঘিরে ধরে কর্মচঞ্চল জীবনপ্রবাহকে। গ্রীষ্মের শান্ত দুপুর মনে করিয়ে দেয় ধরিত্রীর সঙ্গে মানুষের জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্কের কথা। অন্য এক উপলব্বির জগতে নিয়ে যায় মানুষকে।

উপসংহার :

গ্রীষ্মের দুপুরের প্রখর তাপ প্রকৃতি ও জনজীবনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এই প্রভাব কেবল বাহ্যিক নয়, অভ্যন্তরীণও। রহস্যময় প্রকৃতির এ যেন এক গােপন আয়ােজন। গ্রীষ্মের তপ্ত আকাশে এক সময় দেখা যায় সজল-কাজল মেঘ। নেমে আসে স্বস্তির বৃষ্টি। গ্রীষ্মের দুপুরের ঝিমধরা প্রকৃতি আর নিশ্চল স্থবির জনজীবন, শস্যহীন মাঠ, নদীর ঘাটে বাঁধা নৌকা, রােদ ঝলসানাে তপ্ত বাতাসের এই পরিচিত দৃশ্যের কথা এ সময় ভুলে যায় মানুষ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !