থার্মোমিটারে দেহের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার উপরে উঠলেই তাকে জ্বর বলা যাবে। এজন্য পরিবারের সদস্যদের জ্বর মাপার নিয়ম চিকিৎসকের কাছে জেনে নিতে হয়। জ্বরের কারণ নির্ণয়ের জন্য ছয়-আট ঘণ্টা অন্তর অন্তর জ্বরের রেকর্ড লিখে রাখা ভালাে। বিভিন্ন ধরনের ফ্লুতে আমরা প্রায়শই আক্রান্ত হই। এগুলাে ভাইরাস দিয়ে ছড়ায় এবং সহজেই পাশের সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন। পরিবারে কারও জ্বর হলে স্বাভাবিকভাবেই অন্য সদস্যরা ভীত হয়ে পড়েন। জ্বরের ঘরােয়া চিকিৎসা কীভাবে নেবেন, তা এখানে উল্লেখ করা হল।
জ্বর ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার উপরে হলে প্রাথমিকভাবে করণীয়
- রােগীর পুরাে শরীর স্পঞ্জিং করিয়ে দিতে হবে।
- প্রায় দশ মিনিট অবিরাম স্পঞ্জিং করলে তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রী ফারেনহাইট নামানাে সম্ভব।
- স্পঞ্জিং করার সময় হালকা করে ফ্যান ছেড়ে রাখতে হবে এবং বাতাস রােগীর শরীরে যেন ডাইরেক্ট না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- একটি ছােট গামছা বা রুমাল পানিতে ভিজিয়ে শরীর ভিজিয়ে দিতে হবে, অপর একটি শুকনাে ছােট গামছা দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে।
মনে রাখবেন, যে কোনও জ্বরেই স্পঞ্জিং উপকারী এবং এভাবে প্রয়ােজনে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টাই করা যায়।
জ্বর ১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে করণীয়
জ্বর ১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে সিরিয়াসলি নিতে হবে। এক্ষেত্রে রােগীর খিঁচুনি হতে পারে বা রােগী। জ্ঞানও হারাতে পারে। বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের এটি বেশি হয়। খিঁচুনির ইতিহাস থাকলে রােগীকে চিকিৎসকের নির্দেশে ডায়াজিপাম ও ফেনারগন দিতে হয়। উচ্চমাত্রার জ্বর প্রতিরােধের জন্য যে কোন বয়সের রােগীদের বালতি বা গামলায় পানি নিয়ে তাতে চুবানাে বা ভেজানাের পরামর্শ দেয়া হয়। এতে ক্ষতি হওয়ার কোনােই ভয় নেই। জ্বর বেশি বা কম মাত্রায় থাকুক না কেন গােসল করতে নিষেধ নেই। তবে নিউমােনিয়া বা শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ থাকলে গােসল না করানােই ভালাে।
জ্বর ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার উপরে উঠলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বা সাপােজিটরি ব্যবহার করতে হবে। দিনে সাধারণত তিনবার ট্যাবলেট ব্যবহার করা যায়।
তবে যে কোন ওষুধই ডাক্তারের পরামর্শ মতাে খেতে হবে। জ্বর থাকলেই তা ব্যবহার করা যায়।
১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশি জ্বর টানা তিনদিন থাকলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের নির্দেশমতাে এন্টিবায়ােটিক খাবেন, নিজের খেয়ালখুশিমতাে নয়।
যে কোনও জ্বরে ফ্লুইড বা পানীয় খাওয়ানাের প্রতি জোর দেয়া হয়, এতে রােগীর শরীরে হাইড্রেশন হয় এবং দেহের তাপমাত্রা বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। পেন ওয়াটার, ডাব ওয়াটার, ওরস্যালাইন, ডালের পানি, ফলের রস, কোমল পানীয় এক্ষেত্রে উপকারী। স্যুপ, দুধ, হরলিকসও খাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এ সময় মুখ তিতা হয়ে যায় বলে ভিটামিন-সি বা টক জাতীয় ফল খাওয়া প্রয়ােজন। এতে মুখের তিতা ভাব দূর হবে এবং রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বাড়বে।