প্রাচীন যুগ (চর্যাপদ)
- বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ’; এটি প্রাচীন যুগের একমাত্র সাহিত্য নিদর্শন।
- চর্যাপদের রচনাকাল— মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে- (৬৫০-১২০০) খ্রি: মধ্যে।
- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে- (৯৫০-১২০০) খ্রি: মধ্যে।
- ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত Sanskrit Buddhist Literature in Nepal গ্রন্থে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র
- সর্বপ্রথম নেপালের বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ করেন।
- ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে (বাংলা ১৩১৪) মহামহােপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের রাজগ্রন্থশালা” (রয়েল লাইব্রেরি) থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন এবং ১৯১৬ (বাংলা ১৩২৩) খ্রিস্টাব্দে চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরহপাদ ও কৃষ্ণপাদের দোহা এবং ডাকার্ণব এই চারটি পুঁথি একত্র করে বঙ্গীয়
- সাহিত্য পরিষদ থেকে হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা নামে প্রকাশ করেন।
- চর্যাপদ রচিত হয় পাল আমলে, নেপালে যায় সেন আমলে।
- ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ নামটি দিয়ে ছিলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
- যার অর্থ কোনটি আচরণীয়, আর কোনটি নয়।
- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।
- তিনি ১৮৯৮ সালে মহামহােপাধ্যায় উপাধি লাভ করেন এবং ১৯২৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডি.লেট ডিগ্রি লাভ করেন।
- ‘চর্যা’ শব্দের অর্থ হলাে আচরণ।
- চর্যাপদের মূল বিষয়বস্তু বৌদ্ধ ধর্মের গৃঢ় ও তত্ত্বকথা।
- চর্যাপদের আবিস্কৃত পদের সংখ্যা সাড়ে ছেচল্লিশটি।
- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, পদের সংখ্যা ৫০টি এবং সুকুমার সেনের মতে, পদের সংখ্যা ৫১টি।
- ২৩ নং পদটি খণ্ডিত আকারে পাওয়া যায় এবং ২৪, ২৫ এবং ৪৮ নং পদগুলাে পাওয়া যায়নি।
- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত ‘Buddhist Mistic Song’ গ্রন্থে ২৩ জন পদকর্তার কথা বলা হয়েছে।
- সুকুমার সেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস’ (১ম খণ্ড) গ্রন্থে ২৪ জন পদকর্তার কথা বলেছেন।
- চর্যাপদের প্রথম পদটির (কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল) রচয়িতা/ বাংলা সাহিত্যের আদি কবি লুইপা।
- চর্যাপদের সবচেয়ে বেশি পদ রচনা করেছেন কাহ্নপা (১৩টি)।যার অন্য নাম কৃষ্ণাচার্য।
- ভুসুকুপা লিখেছেন ৮টি পদ।
- সরহপা ৪টি পদ রচনা করেন।
- ‘অপণা মাংসে হরিণা বৈরী’ পঙক্তিটির রচয়িতা ভুসুকুপা।
- নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
- চর্যাপদের ২৮ ও ৫০ নং পদের রচয়িতা শবরপা কে চর্যার শ্রেষ্ঠ কবি বলা হয়।
- ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মতে প্রাচীনতম চর্যাকার শবরপা।
- তন্ত্রীপা ও লাড়ীডােম্বীর কোন পদ পাওয়া যায়নি।
- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে শবরপা ও ভুসুকুপা’ বাঙালি ছিলেন।
- অনেকের মতে ‘কুকুরীপানারী পদকর্তা ছিলেন।
- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের ভাষার নাম দিয়েছেন সন্ধ্যাভাষা’ বা ‘আলাে আঁধারী ভাষা।
- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদের ভাষা- বঙ্গকামরূপী।
- চর্যাপদের ভাষা বাংলা প্রমাণ করেন- ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।
- চর্যাপদের টীকাকার- মুনিদত্ত। তিনি ১১ সংখ্যক পদের ব্যাখ্যা দেননি।
- ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় Origin and Development of the Bengali Language
- (ODBL) নামক বিখ্যাত গ্রন্থে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে চর্যাপদের ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য প্রথম আলােচনা
- করেন।
- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ Buddhist Mistic Song’ গ্রন্থে চর্যাপদের ধর্মমত সম্পর্কে আলােচনা করেন।
- মুনিদত্তের টীকার তিব্বতী অনুবাদ করেন কীর্তিচন্দ্র এবং ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ড. প্রবােধচন্দ্র বাগচী চর্যাপদের তিব্বতি অনুবাদ প্রকাশ করেন।
- আধুনিক ছন্দ বিচারে চর্যাপদ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
- চর্যাপদের অন্য নাম- চর্যাগীতিকোষ, দোহাকোষ, চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয় (কোনটি আচরণীয়, আর কোনটি নয়), চর্যাগীতিকা।
- সুতরাং সাহিত্যের প্রাচীন যুগের নিদর্শন এগুলাের যেকোনাে একটি ।
- কারণ চর্যাপদের ভিন্ন নাম এগুলাে ।
- চর্যাপদে ৫টি ভাষার মিশ্রণ রয়েছে বাংলা, হিন্দি, মৈথিলি, অসমিয়া, উড়িয়া।
- চর্যাপদে ৬টি প্রবাদবাক্য পাওয়া গেছে।
- চর্যাপদের ইংরেজি অনুবাদ “মিস্টিক পােয়েট্রি অব বাংলাদেশ”-এর অনুবাদক হাসনা জসীম উদ্দীন মওদুদ।
- গ্রন্থটি প্রকাশ করে হার আনন্দ প্রকাশন, দিল্লি (মার্চ, ২০১৭)।