সরিষার ঔষধি গুনাগুন : শীতের আগে মাঠকে মাঠ সরষে ফল দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়। চারিদিকে মৌ মৌগন্ধে মৌমাছিরা মাতাল হয়। সে কী সুন্দর ছবি! যখন সরষে ফুলের উপর দিয়ে ঢেউ খেলানাে বাতাস বয়ে যায়, তখন আর চোখ ফেরানাে যায় না। কিন্তু তাই বলে কেউই চোখে সরষে ফুল দেখতে চায় না। আর যদি সরষেতে ভূত থাকে, তবে কে-না। চমকে ওঠে’! সরষে ও সরষেফুল নিয়ে কতই-না উপকথা আছে আমাদের জীবনে!) খাটি তেলের খোঁজ পড়লে আগে সরষের কথাই আসে।
এখনাে গ্রামে-গঞ্জে হাটে যাবার সময় হাতে ঝােলানাে থাকে সরষের তেলের বােতলটি। বাংলাদেশে যে সরষে পাওয়া যায়, তা তিন রকম। যথা : রাই সরষে (বড়), সাদা রাই, সরষে। সরষে গাছের জীবন অল্পদিনের। মাত্র এক ফসলি। দেখতে ১-৩ ফুট উঁচু হয়। গাছের গােড়ার পাতাগুলি বড় হয়। আকারে ডিমের মতাে এবং একটু ঢেউ খেলানাে। গ্রামে এমন কোনাে লােক নেই যে, সরষে গাছ চেনে না। সরষের তেল শুধু আমাদের রান্নার কাজেই লাগে না, মাঝে মাঝে ঔষধ হিসেবেও কাজে লাগে। তাই ঘরে এক-আধটু সরষের তেল থাকলে উপকারই বরং বেশি। দেখা যাক, কী কী অসুখে সরষের তেল আমাদের কাজে লাগে:
কুষ্ঠরােগ :
এই রােগের নাম শুনলে অনেকেই ভয়ে শিউরে ওঠেন। তার ধারে কাছে যেতে চান না। ভাবেন কুষ্ঠ ছোঁয়াচে রােগ। কুষ্ঠ আসলে ছোঁয়াচে নয় এবং এর সহজ চিকিৎসাও আছে। এর প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ক্ষত জায়গায়, খাটি সরষের তেল লাগালে উপকার পাওয়া যায়। তবে দরকারে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
ফাইলেরিয়া বা গােদরােগ :
কারাে ফাইলেরিয়া বা গােদরােগ হলে তার জন্য সরষের তেলের চিকিৎসা আছে। শুধু সরষের তেল ৩-৫ গ্রাম রােজ বিকালে একবার করে খেতে হবে। এইভাবে খেলে ধীরে ধীরে উপকার পাওয়া যাবে।
ঝিঝিবাত ও শিরা টান লাগা :
আমরা বলি, শিরায় টান লেগে ব্যথা করছে। এটি আসলে আমাদের শরীরে যে প্রচুর স্নায়ু আছে, তা হঠাৎ করে চাপ খেলে এই রকম অবস্থা হয়। এই টান লাগা ও ঝিঝি বাতে সরষে ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ৩ গ্রাম সাদা সরষে বেটে হেঁকে নিয়ে সরবতের মতাে দু’বেলা খেতে হবে। এর মধ্যে একটু লবণ দেওয়া যেতে পারে। তবে অন্য কিছু মেশানাে যাবে না।
পেটের বায়ু কমাতে ও ক্ষুধা :
কারাে পেটে বায়ু জমলে কিংবা খাবারে অরুচি দেখা দিলে সরষের চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে যা করতে হবে, তা হলােএক গ্রাম সাদা সরষে বেটে, ছেকে, এক কাপ পানিতে শরবতের মতাে করে খেলে অসুবিধা কমে যাবে।
দাঁতের মাঢ়ির ক্ষত :
দাঁতের মাঢ়িতে কোনাে ক্ষত বা ঘা-এর সৃষ্টি হলে তিনভাগ সরষে ও একভাগ সৈন্ধব লবণ গুঁড়া করে, তা দিয়ে দাঁত মাজলে ক্ষতের উপশম হয়।
আমবাত (রসবাত) :
কারাে আমবাত হলে সরষে অল্প পরিমাণে ভেজে নিয়ে তা বেটে ব্যথার জায়গায় লাগালে ব্যথা খানিকটা কমে যাবে।
বসা-সর্দি :
সরষের গুঁড়ার নস্যি নিলে সর্দি তরল হবে এবং হাঁচি হয়ে সর্দি বের হয়ে যাবে।