মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী The Universe and Our Earth
পৃথিবী মানবজাতির আবাসস্থল। পৃথিবীর চারদিকে ঘিরে রয়েছে অসীম মহাকাশ। সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্য রয়েছে। মহাকাশে এরূপ বহু নক্ষত্র রয়েছে। পাশাপাশি চন্দ্র (উপগ্রহ), পৃথিবী (গ্রহ), ধূমকেতু, উল্কা, নীহারিকা প্রভৃতি রয়েছে। ক্ষুদ্র পােকামাকড় ও ধূলিকণা থেকে শুরু করে আমাদের এই পৃথিবী, দূর-দূরান্তের সকল জ্যোতিষ্ক এবং দেখা না দেখা সবকিছু নিয়েই মহাবিশ্ব। এ অধ্যায়ে আমরা মহাকাশ, মহাবিশ্ব, সৌরজগৎ, পৃথিবী ইত্যাদি নিয়ে আলােচনা করব।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা
- মহাবিশ্বের জ্যোতিষ্কমণ্ডলে সৌরজগৎ, পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের অবস্থান এবং বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারব।
- পৃথিবীর আকার-আকৃতি ও উপগ্রহ সম্বন্ধে বর্ণনা করতে পারব।
- অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখাসহ গুরুত্বপূর্ণ রেখাসমূহ ব্যাখ্যা এবং এদের গুরুত্ব বর্ণনা করতে পারব।
- অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা ব্যবহার করে মানচিত্রে বিভিন্ন স্থান শনাক্ত করতে পারব।
- আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি ব্যাখ্যা করতে পারব।
- দিবারাত্রি সংঘটন ও হ্রাস-বৃদ্ধির কারণ এবং প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব।
- ঋতু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব।
- বিভিন্ন উপকরণের সাহায্যে সৌরজগতের মডেল তৈরি করতে পারব।
- আমাদের বসবাসের একমাত্র পৃথিবী সম্পর্কে আরও বেশি জানার আগ্রহ প্রকাশ করব।
মহাকাশ ও মহাবিশ্ব (Space and universe)
সূর্য একটি নক্ষত্র এবং চাঁদ একটি উপগ্রহ। এই আকাশের শুরু ও শেষ নেই। আদি-অন্তহীন এ আকাশকে মহাকাশ বলে। মহাকাশে অসংখ্য জ্যোতিষ্ক রয়েছে। এরা সুশৃঙ্খলভাবে নিজস্ব কক্ষপথে নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের মধ্যে কোনাে কোনােটার আলাে আছে আবার কোনাে কোনােটার আলাে নেই। মহাকাশে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, ধূমকেতু, উল্কা, নীহারিকা, পালসার, কৃষ্ণবামন (Black dwarf), কৃষ্ণগহ্বর (Black hole) প্রভৃতি সবকিছুই রয়েছে। এদের সবাইকে নিয়ে গঠিত হয়েছে মহাবিশ্ব। মহাবিশ্ব যে কত বড় তা কেউ জানে না। কেউ জানে না মহাবিশ্বের আকার বা আকৃতি কেমন, অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন মহাবিশ্বের শুরু ও শেষ নেই। আবার কেউ কেউ এখনও বিশ্বাস করেন মহাবিশ্বের আকার ও আকৃতি আছে। মানুষ প্রতিনিয়তই মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করছে, এর অনেক কিছুই এখনও অজানা রয়ে গেছে। এই অজানা হয়তাে চিরকালই থাকবে।
আরা পড়ুন : ভূগােল ও পরিবেশ Geography and Environment
নক্ষত্র (Stars)
যেসব জ্যোতিষ্কের নিজের আলাে আছে তাদের নক্ষত্র বলে। মহাকাশে অসংখ্য নক্ষত্র রয়েছে (চিত্র ২.১)। খালি চোখে আমরা মাত্র কয়েক হাজার নক্ষত্র দেখতে পাই। এদের কয়েকটি পৃথিবী থেকে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়। নক্ষত্রগুলাে হলাে জ্বলন্ত গ্যাসপিণ্ড, এরা হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে তৈরি। এই গ্যাস অতি উচ্চ (প্রায় ৬০০০° সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় জ্বলছে। সূর্যের প্রখর আলাের জন্য দিনের বেলায় অন্যান্য নক্ষত্র দেখা যায় না।
পৃথিবী থেকে দেখলে মনে হয় নক্ষত্রগুলাে যেন একই সমতলে অবস্থান করছে। কিন্তু পৃথিবী থেকে এরা বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থান করছে। পৃথিবী ও নক্ষত্রদের মধ্যে এবং নক্ষত্রদের পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব এত বেশি যে কিলােমিটার দ্বারা এই দূরত্ব প্রকাশ করা যায় না।এই দূরত্ব আলােক বর্ষ এককে মাপা হয়। আলাে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলােমিটার পথ অতিক্রম করে। এই বেগে এক বছরে আলাে যে পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলােক বর্ষ বলে। সূর্য পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলাে আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড। সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টারাই (Proxima Centauri)। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪.২ আলােক বর্ষ।
নক্ষত্রমণ্ডলী (Constellation) :
মেঘমুক্ত অন্ধকার রাতে আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় কয়েকটি নক্ষত্র বিশেষ আকৃতিতে মিলে জোট বেঁধেছে। এভাবে আমাদের পরিচিত আকৃতিতে নক্ষত্রদলকে নক্ষত্রমণ্ডলী বলে। প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক একটি নক্ষত্রদলকে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করে বিভিন্ন আকৃতি কল্পনা করে বিভিন্ন নাম দিয়েছেন।
এদের কোনােটা দেখতে ভলুকের মতাে, কোনােটা শিকারির মতাে। এদের মধ্যে সপ্তর্ষিমণ্ডল (Great Bear), কালপুরুষ (Orion), ক্যাসিওপিয়া (Cassiopeia), লঘুসপ্তর্ষি (Little Bear), বৃহৎ কুকুরমণ্ডল (Canis Major) ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য।
গ্যালাক্সি (Galaxy) :
মহাকাশে গ্রহ, নক্ষত্র, ধূলিকণা, ধূমকেতু বাম্পকুণ্ডের এক বিশাল সমাবেশকে গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রজগৎ বলে। মহাকাশে একশত বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে (চিত্র ২.২)। এদের বিভিন্ন আকার ও আকৃতি রয়েছে, তবে এদের অধিকাংশই সর্পিলাকার বা উপবৃত্তাকার। সর্পিলাকার গ্যালাক্সিগুলাে বৃহৎ আকৃতির এবং উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সিগুলাে বেশি উজ্জ্বল। এরা পরস্পর ব্যাপক ব্যবধানে অবস্থিত। কোনাে একটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশকে ছায়াপথ বলে।
নীহারিকা (Nebulae) :
নীহারিকা হলাে মহাকাশে অসংখ্য স্বল্পালােকিত তারকার আস্তরণ। এদের আকার বিচিত্র। কিছু নীহারিকার দেহ গ্যাসীয় পদার্থে পূর্ণ। এদেরকে গ্যাসীয় নীহারিকা বলে। এক একটি নীহারিকার মধ্যবর্তী দূরত্ব ব্যাপক। এক একটি নীহারিকার মাঝে কোটি কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে। এরা যেহেতু পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলােক বর্ষ দূরে রয়েছে, তাই এদের মাঝে যেসব নক্ষত্র রয়েছে তাদের পৃথকভাবে শনাক্ত করা যায় না।
ছায়াপথ (Milky Way) :
কোনাে একটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশকে ছায়াপথ বা আকাশ গঙ্গা বলে। অন্ধকার আকাশে এদের উজ্জ্বল দীপ্তি দীর্ঘপথের মতাে দেখায়। একটি ছায়াপথ লক্ষ কোটি নক্ষত্রের সমষ্টি। শীতকালে রাত্রিবেলা পরিষ্কার আকাশে লক্ষ করলে উত্তর-দক্ষিণে বেশ বড় পরিসরযুক্ত তেজোদ্দীপ্ত স্বচ্ছ দীর্ঘ আলাের রেখা দেখা যায়। তারকা খচিত এই আলাের পথই হলাে ছায়াপথ। বিজ্ঞানীরা একে বিরাট চক্রাকার মণ্ডল বলে অনুমান করেন। সৌরজগৎ এরকম একটি ছায়াপথের অন্তর্গত।
আরো পড়ুন : Current Affairs May 2021 PDF | কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স মে ২০২১ পিডিএফ
উল্কা (Meteor) :
রাতের মেঘমুক্ত আকাশে অনেক সময় মনে হয় যেন নক্ষত্র ছুটে যাচ্ছে বা মনে হয় কোনাে নক্ষত্র যেন এই মাত্র খসে পড়ল। এই ঘটনাকে নক্ষত্রপতন বা তারা খসা বলে। এরা কিন্তু আসলে কোনাে নক্ষত্র নয়, এদের নাম উল্কা (চিত্র ২.৩)। মহাশুন্যে অজস্র জড়পিণ্ড ভেসে বেড়ায়। এই জড়পিণ্ডগুলাে অভিকর্ষ বলের আকর্ষণে প্রচণ্ড গতিতে (সেকেন্ডে প্রায় ৩ কিলােমিটার) পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। বায়ুর সংস্পর্শে এসে বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে এরা জ্বলে ওঠে। ফলে এদের ছুটন্ত তারা বলে মনে হয়। বেশিরভাগ উল্কাপিণ্ডই আকারে বেশ ক্ষুদ্র।
ধূমকেতু (Comet) :
মহাকাশে মাঝে মাঝে একপ্রকার জ্যোতিষ্কের আবির্ভাব ঘটে। এদের একটি মাথা ও একটি লেজ আছে। এসব জ্যোতিষ্ককে ধূমকেতু বলে। ধূমকেতু আকাশের এক অতি বিস্ময়কর জ্যোতিষ্ক (চিত্র ২.৪)। সৌরজগতের মধ্যে ধূমকেতুর বসবাস হলেও এরা কিছুদিনের জন্য উদয় হয়ে আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। সূর্যের চারদিকে অনেক দূর দিয়ে এরা পরিক্রমণ করে। সূর্যের নিকটবর্তী হলে এদের দেখা যায়। এরা সূর্যের যত কাছাকাছি আসতে থাকে তত এর লেজ লম্বা হতে থাকে। এরা অনেক দীর্ঘ কক্ষপথে সূর্যকে পরিক্রমণ করে বলে অনেক বছর পর পর এরা আবির্ভূত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালি যে ধূমকেতু আবিষ্কার করেন তা হ্যালির ধূমকেতু নামে পরিচিত। হ্যালির ধূমকেতু প্রতি ৭৬ বছরে একবার দেখা যায়। হ্যালির ধূমকেতু ২৪০ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দ থেকে দেখা যায় এবং সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে হ্যালির ধূমকেতু দেখা গেছে।
গ্রহ (Planet) :
মহাকাশে কতকগুলাে জ্যোতিষ্ক সূর্যকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পথে পরিক্রমণ করে। এদের নিজেদের কোনাে আলাে বা তাপ নেই। মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এরা সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এরা সূর্য থেকে আলাে ও তাপ পায়। এই তাপেই উত্তপ্ত হয়। এরা তারার মতাে মিটমিট করে জ্বলে না। এসব জ্যোতিষ্ককে গ্রহ বলে। আমাদের সৌরজগতের আটটি গ্রহ হলাে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন।
উপগ্রহ (Satellite) :
কিছু কিছু জ্যোতিষ্ক গ্রহকে ঘিরে আবর্তিত হয়, এদের উপগ্রহ বা চাদ বলে। মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এরা গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘােরে। এদের নিজস্ব আলাে বা তাপ নেই। এরা সূর্য বা নক্ষত্র থেকে আলাে বা তাপ পায়। চাঁদ পৃথিবী গ্রহের একমাত্র উপগ্রহ। কোনাে কোনাে গ্রহের উপগ্রহ আছে, কোনােটির নেই। বুধ ও শুক্রের কোনাে উপগ্রহ নেই। শনির উপগ্রহ সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন উপগ্রহ আবিষ্কৃত হচ্ছে। টাইটান শনি গ্রহের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ।
কৃত্রিম উপগ্রহ :
মানুষের তৈরি বিভিন্ন উপগ্রহ আছে যারা পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। এদের বলে কৃত্রিম উপগ্রহ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, তথ্য আদান-প্রদান, গােয়েন্দা নজরদারি, খনিজ সম্পদের সন্ধান, পরিবেশ দূষণ নির্ণয় ইত্যাদি কাজে এসব কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়।
সৌরজগৎ (Solar System)
সূর্য এবং তার গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ, অসংখ্য ধূমকেতু ও অগণিত উল্কা নিয়ে সৌরজগৎ গঠিত (চিত্র ২.৫)। সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। গ্রহগুলাে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। সৌরজগতের যাবতীয় গ্রহ-উপগ্রহের নিয়ন্ত্রক হলাে সূর্য। সূর্যকে ভিত্তি করে সৌরজগতের যাবতীয় কাজ-কর্ম চলে। এই মহাবিশ্বের বিশালতার মধ্যে সৌরজগৎ নিতান্তই ছােট।
সূর্য (Sun) :
সূর্য একটি নক্ষত্র। এটি একটি মাঝারি আকারের হলুদ বর্ণের নক্ষত্র। এর ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলােমিটার এবং ভর প্রায় ১.৯৯*১০১৩ কিলােগ্রাম। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতিষ্ক। সূর্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহের তাপ ও আলাের মূল উৎস সূর্য। সূর্যের আলাে ছাড়া পৃথিবী চির অন্ধকার থাকত এবং পৃথিবীতে জীবজগৎ ও উদ্ভিদজগতের কিছুই বাচত না। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে আটটি গ্রহ।
সূর্য থেকে গ্রহগুলাে দূরত্ব অনুযায়ী পর পর যেভাবে রয়েছে তা হলাে বুধ (Mercury), শুক্র (Venus), পৃথিবী (Earth), মঙ্গল (Mars), বৃহস্পতি (Jupiter), শনি (Saturn), ইউরেনাস (Uranus) এবং নেপচুন (Neptune)। গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃহস্পতি এবং ছােট বুধ। বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি বেশ উজ্জ্বল এবং কোনাে যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই দেখা যায়। ইউরেনাস ও নেপচুন এতটা কম উজ্জ্বল যে দূরবীক্ষণ ছাড়া এদের দেখা যায় না।
বুধ (Mercury) :
বুধ সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ৫.৮ কোটি কিলােমিটার; এর ব্যাস ৪,৮৫০ কিলােমিটার। সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকায় সূর্যের আলাের তীব্রতার কারণে সবসময় একে দেখা যায় না। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে বুধের সময় লাগে ৮৮ দিন। সুতরাং বুধ গ্রহে ৮৮ দিনে এক বছর হয়। বুধের মাধ্যাকর্ষণ বল এত কম যে এটি কোনাে বায়ুমণ্ডল ধরে রাখতে পারে না। এখানে নেই মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস ও পানি। সুতরাং প্রাণীর অস্তত্ব নেই। ১৯৭৪ সালে মার্কিন মহাশূন্যযান মেরিনার-১০ বুধের যে ছবি পাঠায় তা থেকে দেখা যায় যে, বুধের উপরিতল একদম চাঁদের মতাে। ভূত্বক অসংখ্য গর্তে ভরা, এবড়াে-থেবড়াে। এখানে আছে অসংখ্য পাহাড় ও সমতলভূমি। বুধের কোনাে উপগ্রহ নেই।।
শুক্র (Venus) :
বুধের মতাে শুক্র গ্রহকেও ভােরের আকাশে শুকতারা এবং সন্ধ্যার আকাশে সন্ধ্যাতারা হিসেবে দেখা যায়। শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা আসলে কোনাে তারা নয়। কিন্তু নক্ষত্রের মতাে জ্বলজ্বল করে বলেই আমরা একে ভুল করে তারা বলি। শুক্র গ্রহটি ঘন মেঘে ঢাকা। তাই এর উপরিভাগ থেকে সূর্যকে কখনই দেখা যায় না। শুক্রের মেঘাচ্ছন্ন। বায়ুমণ্ডল প্রধানত কার্বন ডাইঅক্সাইডের তৈরি। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রহ। সূর্য থেকে শুক্র গ্রহের দূরত্ব ১০.৮ কোটি কিলােমিটার। এর দিন ও রাতের মধ্যে আলাের বিশেষ কোনাে তারতম্য হয় না। এখানে বৃষ্টি হয় তবে এসিড বৃষ্টি। শুক্রের ব্যাস ১২,১০৪ কিলােমিটার। সূর্যকে ঘুরে আসতে শুক্রের সময় লাগে ২২৫ দিন। সুতরাং শুক্রে ২২৫ দিনে এক বছর। শুক্রের কোনাে উপগ্রহ নেই। সকল গ্রহ এদের নিজ অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্বে পাক খেলেও একমাত্র শুক্র গ্রহ পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাক খায়।
পৃথিবী (Earth) :
পৃথিবী আমাদের বাসভূমি। এটি সূর্যের তৃতীয় নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলােমিটার। এর ব্যাস প্রায় ১২,৬৬৭ কিলােমিটার। পৃথিবী একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। তাই এখানে ৩৬৫ দিনে এক বছর। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যার বায়ুমণ্ডলে প্রয়ােজনীয় অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও তাপমাত্রা রয়েছে যা উদ্ভিদ ও জীবজন্তু বসবাসের উপযােগী। সৌরজগতের গ্রহগুলাের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে।
মঙ্গল (Mars) :
মঙ্গল পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী। বছরের অধিকাংশ সময় একে দেখা যায়। খালি চোখে মঙ্গল গ্রহকে লালচে দেখায়। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ২২.৮ কোটি কিলােমিটার। এর ব্যাস ৬,৭৮৭ কিলােমিটার, পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় অর্ধেক। এই গ্রহে দিনরাত্রির পরিমাণ পৃথিবীর প্রায় সমান। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে মঙ্গলের সময় লাগে ৬৮৭ দিন। মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে রয়েছে গিরিখাত ও আগ্নেয়গিরি। এ গ্রহে অক্সিজেন ও পানির পরিমাণ খুবই কম এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ এত বেশি (শতকরা ৯৯ ভাগ) যে প্রাণীর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। মঙ্গলে ফোবস ও ডিমােস নামে দুটি উপগ্রহ রয়েছে।
বৃহস্পতি (Jupiter) :
বৃহস্পতি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। একে গ্রহরাজ বলে। এর ব্যাস ১,৪২,৮০০ কিলােমিটার। আয়তনে পৃথিবীর চেয়ে ১,৩০০ গুণ বড়। এটি সূর্য থেকে প্রায় ৭৭.৮ কোটি কিলােমিটার দূরত্বে রয়েছে। তাই পৃথিবীর সাতাশ ভাগের একভাগ তাপ পায়। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে তৈরি। বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে তাপমাত্রা খুবই কম এবং অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি (প্রায় ৩০,০০০° সেলসিয়াস)। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে বৃহস্পতির সময় লাগে ৪,৩৩১ দিন। বৃহস্পতির উপগ্রহের সংখ্যা ৬৭টি। এ গ্রহে জীবের অস্তিত্ব নেই।