পৌরনীতি ও নাগরিকতা
পৌরনীতি ও নাগরিকতাকে বলা হয় নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। কারণ নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল বিষয় পৌরনীতিতে আলােচনা করা হয়।রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের ‘পৌরনীতি’ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়ােজন। এ অধ্যায়ে পৌরনীতি ও নাগরিকতার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক যেমন- পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের উৎপত্তি, সরকার ইত্যাদি সম্পর্কে আলােচনা স্থান পেয়েছে।
এ অধ্যায় পড়া শেষে আমরা
• পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ে ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব।
• পৌরনীতি পাঠের প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
• পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব ।
• রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব।
• পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারব।
পৌরনীতি ও নাগরিকতা
পৌরনীতির ইংরেজি শব্দ সিভিক্স (Civics)। সিভিক্স শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দ সিভিস (Civis) এবং সিভিটাস (Civitas) থেকে এসেছে। সিভিস শব্দের অর্থ নাগরিক (Citizen) আর সিভিটাস শব্দের অর্থ নগর-রাষ্ট্র (City State) । প্রাচীন গ্রিসে নাগরিক ও নগর-রাষ্ট্র ছিল অবিচ্ছেদ্য। ঐ সময় গ্রিসে ছােট ছােট অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠে নগর-রাষ্ট্র। যারা নগর রাষ্ট্রীয় কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করত, তাদের নাগরিক বলা হতাে। শুধু পুরুষশ্রেণি রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযােগ পেত বিধায় তাদের নাগরিক বলা হতাে দাস, মহিলা ও বিদেশিদের এ সুযােগ ছিল না।
আরো পড়ুন : Current Affairs May 2021 PDF | কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স মে ২০২১ পিডিএফ
নাগরিকের আচরণ ও কার্যাবলি নিয়ে আলােচনাই ছিল পৌরনীতির বিষয়বস্তু। বর্তমানে একদিকে নাগরিকের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে, অন্যদিকে নগর-রাষ্ট্রের স্থলে বৃহৎ আকারের জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন- বাংলাদেশের ক্ষেত্রফল ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলােমিটার এবং লােকসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক অধিকার ভােগের পাশাপাশি আমরা রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকি।
তবে আমাদের মধ্যে যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে, তারা ভােটদান কিংবা নির্বাচিত হওয়ার মতাে রাজনৈতিক অধিকার ভােগ করতে পারে না। তাছাড়া বিদেশিদের কোনাে রাজনৈতিক অধিকার ভােগ করার সুযােগ নেই। যেমন- নির্বাচনে ভােটদান বা নির্বাচিত হওয়ার অধিকার নেই। মূলত রাষ্ট্র প্রদত্ত নাগরিকের মর্যাদাকে নাগরিকতা বলা হয়। নাগরিকতা ও রাষ্ট্রের সাথে জড়িত সবই ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতার বিষয়বস্তু। ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ই. এম. হােয়াইট যথার্থই বলেছেন, পৌরনীতি হলাে জ্ঞানের সেই মূল্যবান শাখা, নাগরিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলােচনা করে।
আরো পড়ুন :
- বাংলাদেশ সরকারের স্বরূপ ও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ
- বাংলাদেশের সংবিধানের সংশােধনীসমূহ
- বাংলাদেশের সংবিধান ও বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
- উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
- অলিখিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
- লিখিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
- সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ
- সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি
- সংবিধানের ধারণা ও গুরুত্ব
- আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ
- পৌরনীতি ও নাগরিকতা | পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরিসর বা বিষয়বস্তু
- পরিবার কি | পরিবারের শ্রেণিবিভাগ | পরিবারের কার্যাবলি
- রাষ্ট্র কাকে বলে? রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ও কি কি ?
বিষয়বস্তুর দৃষ্টিতে পৌরনীতিকে দুটি অর্থে আলােচনা করা যায়। ব্যাপক অর্থে, পৌরনীতি নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে আলােচনা করে। যেমন- অধিকার ও কর্তব্য, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নাগরিকতার স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, নাগরিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সংকীর্ণ অর্থে, অধিকার ও কর্তব্য পৌরনীতির বিষয়বস্তু। সুতরাং বলা যায়, নাগরিক, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের আচরণ ও কার্যাবলি নিয়ে ধারাবাহিক আলােচনার মাধ্যমে যে বিষয়টি আদর্শ নাগরিক জীবন সম্বন্ধে জ্ঞান দান করে, তাকে ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বলা হয়।
পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরিসর বা বিষয়বস্তু
পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরিসর ব্যাপক ও বিস্তৃত। নিমে আমরা এর পরিসর বা বিষয়বস্তু নিয়ে আলােচনা করব
১. নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য :
রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা যেমন রাষ্ট্রপ্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মৌলিক অধিকার ভােগ করি, তেমনি আমাদেরকেও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। যেমন- রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ, আইন মান্য করা, সঠিক সময়ে কর প্রদান করা, সন্তানদের শিক্ষিত করা, রাষ্ট্রের সেবা করা, সততার সাথে ভােটদান ইত্যাদি। নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’র বিষয়বস্তু । তাছাড়া সুনাগরিকতার বৈশিষ্ট্য, সুনাগরিকতা অর্জনের প্রতিবন্ধকতা এবং তা দূর করার উপায় ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বিষয়ে আলােচনা করা হয়।
আরো পড়ুন : পূর্ব বাংলার আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদের উত্থান (১৯৪৭খ্রি.-১৯৭০খ্রি.)
২. সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান :
নাগরিক জীবনকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। যেমন- পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, নির্বাচন, রাজনৈতিক দল ইত্যাদি। এদের উৎপত্তি, প্রকৃতি ও কার্যাবলি পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ে আলােচনা করা হয়। তা ছাড়া সামাজিক মূল্যবােধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য, সংবিধান, জনমত প্রভৃতি পৌরনীতি ও নাগরিকতার আলােচ্য বিষয়।
৩. নাগরিকতার স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় :
আমরা যেখানে বাস করি, সেখানে আমাদেরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি। ঠিক তেমনি নাগরিককে কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। এসব স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গঠন, কার্যাবলি, অবদান এবং নাগরিকের সাথে
এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক নিয়ে পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ে আলােচনা করা হয়।
৪. নাগরিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ :
পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়টি নাগরিকদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলােচনা করে। যেমন- অতীতে নাগরিকতা কীভাবে নির্ণয় করা হতাে, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য কেমন ছিল, বর্তমানের নাগরিকের মর্যাদা কিরূপ- এসবের উপর , ভিত্তি করে ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বিষয়টি ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের দিকনির্দেশনা প্রদান করে।