বাংলা রচনা হযরত মুহম্মদ (স.)

Preparation BD
By -
0

ভূমিকা : যেসব মহাপুরুষ মানবসভ্যতার ইতিহাসে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন হযরত মুহম্মদ(স.)। সত্য, ন্যায় ও আদর্শে মহান করে স্রষ্টা তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ বা অন্ধকার যুগে তিনি আলােকবর্তিকা হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁর আদর্শ পথভ্রষ্ট মানুষকে মুক্তিমন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। হযরত মুহম্মদ(স.)-এর উদারতা, মানবিকতা, সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল আস্থা, তাঁর ব্যক্তিত্ব ও কর্মতৎপরতা দেশ-কাল-সম্প্রদায় ও জাতি-ধর্মকে অক্রিম করে বিশ্বমানবিকতার স্তরে উত্তীর্ণ হয়েছে। তিনি যেমন আরব জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন আল্লাহর নির্দেশিত পথে, তেমনি সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য নির্বিরােধ শান্তির এক জ্যোতির্ময় পথ প্রদর্শন করে গেছেন।

জন্ম ও বংশ পরিচয় : হযরত মুহম্মদ(স.) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ রাসুল। তিনি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক। আরবের সম্রান্ত কুরাইশ বংশে, পবিত্র নগরী মক্কায় ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম বিবি আমেনা। আমাদের প্রিয় নবী জন্মের পূর্বেই পিতাকে হারান এবং ছয় বছর বয়সে তাঁর মাতা ইন্তেকাল করেন। এরপর শিশু মুহম্মদ(স.)-কে তার দাদা আব্দুল মােত্তালিব পরম স্নেহে লালন পালন করেন। কিন্তু আট বছর বয়সে দাদা আব্দুল মােত্তালিবও মারা যান। পিতৃব্য আবু তালিব এরপর তাঁর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই মহানবী ছিলেন সহজ সরল ও কোমল স্বভাবের অধিকারী। সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, ধর্মবােধ প্রভৃতি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। সত্যবাদিতার জন্য শৈশবেই তিনি ‘আল আমিন’ বা ‘বিশ্বাসী’ উপাধিতে ভূষিত হন।

বিবাহ ও নবুয়ত প্রাপ্তি : হযরত মুহম্মদ(স.) -এর সততা, ন্যায়পরায়ণতার কথা সৌরভের মতাে মক্কা নগরীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। কারণ সেই যুগে এ ধরনের অকৃত্রিম চরিত্রের অধিকারী কেউ ছিলেন না। মক্কার ধনবতী বিধবা মহিলা বিবি খাদিজা তাঁর সুখ্যাতি শুনে তাঁকে তাঁর ব্যবসার দায়িত্বভার দেন। বিশ্বস্ততার সঙ্গে হযরত ব্যবসা পরিচালনা করে বিবি খাদিজার ব্যবসায় সমৃদ্ধি আনয়ন করেন। হযরত মুহম্মদ(স.)এর দক্ষতা, সততা ও অতুলনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়ে বিবি খাদিজা তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

তখন হযরত মুহম্মদ(স.)-এর বয়স পঁচিশ বছর আর বিবি খাদিজার বয়স চল্লিশ। উভয়ে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। সে যুগে আরবের অবস্থা ছিল দ্বন্দ্ববিক্ষুদ্ধ। গােত্রে গােত্রে হানাহানি, মারামারি, পারস্পরিক যুদ্ধ ও লড়াইয়ের ফলে নিয়ত রক্তাক্ত ছিল আরবভূমি। একদিকে অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অন্যদিকে ধর্মের নামে প্রচলিত ছিল নানা কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামি ও অর্থহীন আচার-অনুষ্ঠান। কন্যাশিশুকে জীবন্ত পুঁতে ফেলার মতাে জঘন্য অপরাধ ছিল সেই সময়ের নিত্য ঘটনা। মক্কার কাবা ঘরেই ছিল অসংখ্য মূর্তি।

মূর্তিপূজার নানা স্বতন্ত্র রীতি ছিল। গােত্রে গােত্রে বিরােধ ছিল। জাতির জীবনে অনাচার, অবিচার ও অন্ধকার অমানিশা হযরত মুহম্মদ(স.)-কে বিচলিত করত। তিনি সবসময় এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য চিন্তাভাবনা করতেন। মক্কার অদূরে ‘হেরা পর্বতে গিয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ধ্যানে আত্মনিয়ােগ করেন। সুদীর্ঘ পনেরাে বছর ধ্যান করার পর আল্লাহ্র দূত জিব্রাইল (আ) ফেরেশতা ঐশী বাণী নিয়ে তাঁর কাছে আসেন এবং তাঁকে আল্লাহর বাণী পাঠ করে শােনান। এভাবে ওহি নাজেল হয় এবং তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন।

ইসলাম প্রচার : নবুয়ত প্রাপ্তির পর হযরত মুহম্মদ(স.) আল্লাহর আদেশে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। প্রথমে স্ত্রী বিবি খাদিজা ইমান এনে মুসলমান হলেন। তারপর ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত আবু বকর (র.), হযরত আলি (র.), যায়েদ বিন হারেস প্রমুখ। ক্রমেই মক্কায় মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে কুরাইশগণ তার বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং তাকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে।

মদিনায় হিজরত : কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে হযরত মুহম্মদ(স.) আল্লাহর আদেশে মক্কা থেকে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন। যেসব মক্কাবাসী হযরতের সঙ্গে মদিনায় গিয়েছিলেন তাদের মুহাজির (শরণার্থী) এবং যারা তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন তাদের আনসার (সাহায্যকারী) বলা হয়। মক্কা বিজয় ও মদিনা সনদ : মদিনায় ইসলামধর্মের প্রতিষ্ঠা ও হযরত মুহম্মদ(স.)-এর প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে মক্কার কুরাইশগণ শঙ্কিত ও ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন।

মহানবী শুধু একজন ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না, তিনি একজন শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, দূরদর্শী রাজনীতিবিদও ছিলেন। তাঁর দূরদর্শিতার কারণে মক্কার ইহুদিদের সঙ্গে তার একটি চুক্তি হয়। তা হুদাইবিয়ার সন্ধি’ নামে পরিচিত। অবশেষে তিনি ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা বিজয় করেন এবং সাহাবিদের নিয়ে পবিত্র হজ্জব্রত পালন করেন। হযরত মুহম্মদ(স.) মুসলমান, ইহুদি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঐক্য সমঝােতার জন্য কতিপয় শর্তযুক্ত সনদে স্বাক্ষর করেন। তা ‘মদিনা সনদ নামে অভিহিত। এই সনদকেই প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।

হযরত মুহম্মদ(স.)-এর ওফাত : ৬৩ বছর বয়সে, হিজরি একাদশ বত্সরে, ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ (৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জুন) সােমবার দ্বিপ্রহরে নামাযরত অবস্থায় হযরত মুহম্মদ(স.)-এর ওফাত হয়।

উপসংহার : হযরত মুহম্মদ(স.) নবীদের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন’ অর্থাৎ জগতের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তিনি ছিলেন ফুলের মতাে সৌরভময় মহাপুরুষ। শিশুর মতাে সরল। সত্য ন্যায়ের প্রতি ছিল তাঁর অনড় বিশ্বাস। তাঁর জীবনাদর্শ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের জন্যে অনুসরণীয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !